বাঙালির মুক্তির দাবিতে অনড় বঙ্গবন্ধুর চূড়ান্ত কর্মসূচির দিনগুলি-৭৭ মার্চের গণ-সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর সম্ভাব্য মুক্তির বার্তাকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতিকে দ্বিধা-বিভক্ত করতেই ৬ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয় জান্তাপ্রধান ইয়াহিয়া। কিন্তু ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসভবনে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইয়াহিয়ার সব প্রস্তাবকে নাকচ করে দেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উত্তাল জনসমুদ্রে রণপ্রস্তুতির চূড়ান্ত দিক-নির্দেশনা দেন তিনি।এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে পাকিস্তানিদের প্রতি দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনের বিজয়অ নেতা হিসেবে আইনত শেখ মুজিবই দেশের শাসন পরিচালনার অধিকারী। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত গরতার কর্মসূচির মধ্যেই ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগের মিছিলের পাশাপাশি মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সশরীরে বিক্ষুব্ধ মিছিল কর্মসূচি পালন করে ঢাকার রাজপথে। ৭ মার্চের ভাষণের সময় ঢাকা বেতারের সম্প্রচার বন্ধ রাখে পাকিস্তানিরা। ফলে তা সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব হয় না। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত দশ লাখের অধিক মানুষের ভিড়ে সভার শুরু আগেই ধানমন্ডি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো রাজধানী লোকে-লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এমন জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন- ‘ মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ এসময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের প্রতিটি মহকুমা, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম, মহল্লায় সংগ্রাম কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানিদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, ‘ সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।’বাংলাদেশের সর্বময় অধিপতি হিসেবে ভাষণে স্পষ্টভাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সে জন্য সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে, সেগুলির হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, গরুর গাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে; শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি গভর্নমেণ্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা কোনো কিছু চলবে না। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা বেতন নিয়ে আসবেন। এর পরে যদি বেতন দেওয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ (১৯৭১ সালে ৮ মার্চের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদগুলো থেকে এসব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে)#March1971#Bangladesh#Independence#MonthOfIndependence#Bangabandhu#SheikhMujib#AwamiLeague#বঙ্গবন্ধু#শেখমুজিব#অগ্নিঝরা_মার্চ